চাকরি-পূর্ব প্রশিক্ষণ বা ইন্টার্নশিপ কি, ইন্টার্নশিপ এর উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ এবং কিভাবে ইন্টার্নশিপ পেতে পারেন সে সম্পর্কে জানবেন এই আর্টিকেলে।
- ইন্টার্নশিপ কাকে বলে
- ইন্টার্নশিপ এর বৈশিষ্ট্য
- ইন্টার্নশিপ এর প্রকারভেদ
- ইন্টার্নশিপ কিভাবে পাবেন
- ইন্টার্নশিপ এর উদ্দেশ্য
- ইন্টার্নশিপ এর সুবিধা-অসুবিধা
- ইন্টার্নশিপে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
ইন্টার্নশিপ কাকে বলে
ইন্টার্নশিপ এর বাংলা অর্থ চাকরি-পূর্ব প্রশিক্ষণ। ইন্টার্নশিপ হলো অস্থায়ী কাজের অভিজ্ঞতা যা শিক্ষার্থী বা গ্রাজুয়েটদের কোনো নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি বা কর্মস্থলে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে। ইন্টার্নশিপ কয়েক মাস থেকে বছরব্যাপীও হতে পারে।
যিনি ইন্টার্নশিপ করেন তাকে ইন্টার্ন বলা হয়।
শিক্ষার্থী বা সদ্য স্নাতকধারীদের জন্য কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনে ও ক্যারিয়ার কিক-স্টার্ট করতে ইন্টার্নশিপ সাহায্য করে। কোনো পছন্দের প্রফেশনাল ফিল্ডে কদম রাখার আগে আসল কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনে ইন্টার্নশিপ একটি সহজ পছন্দ।
ইন্টার্নশিপ এর বৈশিষ্ট্য
ইন্টার্নশিপ এর বৈশিষ্ট্য বা ফিচার সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।
ইন্টার্নশিপ এর মাধ্যমে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা যায়। এর পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং ও রেজ্যুমে তৈরী করার সুবিধাও পাওয়া যায় ইন্টার্নশিপ এর বদৌলোতে।
ইন্টার্নশিপ এর মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। আবার কলিগ ও সুপারভাইজারদের কাছ থেকে মেন্টরশিপ পেয়ে ক্যারিয়ারকে অনেক এগিয়ে নেওয়া যায়। অনেক সময় কলেজ ক্রেডিট পাওয়ার পাশাপাশি ফুল টাইম কাজের সুযোগও পাওয়া যায় ইন্টার্নশিপ এর মাধ্যমে।
ইন্টার্নশিপ এর প্রকারভেদ
বেতন এর উপর ভিত্তি করে ইন্টার্নশিপ দুই প্রকার হয়ে থাকে:
- পেইড ইন্টার্নশিপ
- আনপেইড ইন্টার্নশিপ
পেইড ইন্টার্নশিপ এর ক্ষেত্রে একজন ইন্টার্নকে বেতন প্রদান করা হয়ে থাকে যেখানে আনপেইড বা ফ্রি ইন্টার্নশিপ অবৈতনিক হয়ে থাকে।
আবার সময়ের উপর ভিত্তি করে ইন্টার্নশিপকে আরো দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে – পার্ট টাইম ইন্টার্নশিপ ও ফুল টাইম ইন্টার্নশিপ।
এছাড়া অর্থ প্রদান করে কারিগরি শিক্ষা অর্জনের এক ধরনের ইন্টার্নশিপও রয়েছে।
আবার কাজের স্থানের উপর ভিত্তি করে অন-সাইট ও রিমোট, এই দুই ক্যাটাগরিতেও ইন্টার্নশিপকে ভাগ করা যেতে পারে।
ইন্টার্নশিপ কিভাবে পাবেন
ইন্টার্নশিপ এর খোঁজ পাওয়া বর্তমানে বেশ সহজ। লিংকডইন ও ফেসবুক এর পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ এর খবর পেয়ে যাবেন বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে। আবার চাইলে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করতে পারেন তারা ইন্টার্নশিপ প্রদান করছে কিনা।
ইন্টার্নশিপ বিডি ডট কম ওয়েবসাইটে এক স্থানে পেয়ে যাবেন লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল সকল ইন্টার্নশিপ এর খবর। নিচে থাকা লিংকে ক্লিক করে এখনই জেনে নিন লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টার্নশিপ এর খোঁজ।
ইন্টার্নশিপ এর উদ্দেশ্য
একজন শিক্ষার্থী বা গ্রাজুয়েট এর ইন্টার্নশিপ থেকে কিছু প্রত্যাশা থাকে যেগুলোকে ইন্টার্নশিপ এর উদ্দেশ্য বলা চলে। এগুলোকে ইন্টার্নশিপ এর প্রয়োজনীয়তা হিসেবেও গণ্য করা যেতে পারে। ইন্টার্নশিপ এর উদ্দেশ্যসমূহ হলো:
নতুন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন
ইন্টার্নশিপ এর ক্ষেত্রে যেহেতু অফিসে কাজ করতে হয় তাই এই সম্পর্কিত নতুন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা যায়। অন্যদের সাথে কাজ করে কর্মস্থলে ইন্টার্নশিপ এর প্রয়োজনীয়তা হলো দক্ষতা অর্জন করা।
কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানো
কাজের খাতিরে কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজন হয় ইন্টার্নশিপ এর ক্ষেত্রে। এই দক্ষতা বাড়লে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া ও অন্যদের সাথে যোগাযোগ সহজ হয়।
সিভিকে সমৃদ্ধ করা
ইন্টার্নশিপ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা সিভিতে উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে। তাই কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়ার আগে ইন্টার্নশিপ করলে সিভিতে “Experience” সেকশনে লেখার মত নতুন একটি কলাম পাওয়া যায়।
নেটওয়ার্কিং
ইন্টার্নশিপ এর মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালদের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয় যা সাধারণভাবে তৈরী করা বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়া অনেক সময় ভালো সম্পর্কের খাতিরে মেন্টর পাওয়া যায় ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে।
পড়ালেখার বাস্তব প্রয়োগ করা
এতো বছর ধরে বইয়ের পাতায় পড়ে আসা কিংবা বাহ্যিক উৎস থেকে শেখা সকল জ্ঞান প্রয়োগ করার ক্ষেত্র হতে পারে ইন্টার্নশিপ।
কর্মস্থলের শিষ্টাচার শেখা
ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে অফিসে কাজ করতে হয়, যার ফলে অফিস বা কর্মস্থলের শিষ্টাচার শিখতে হয়। আর এরই মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বা গ্রাজুয়েট এর প্রফেশনালিজম বা পেশাদারিত্বের হাতেখড়ি হয় ইন্টার্নশিপ এর মাধ্যমে।
ইন্টার্নশিপ এর সুবিধা-অসুবিধা
ইন্টার্নশিপ এর সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। চলুন একনজরে ইন্টার্নশিপ এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
ইন্টার্নশিপ এর সুবিধা
- বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়
- নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করা যায়
- ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালদের সাথে নেটওয়ার্কিং করা যায়
- রেজ্যুমে তৈরী ও চাকরি পেতে সাহায্য করে
- ইন্ডাস্ট্রি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়
- অভিজ্ঞ কলিগ থেকে মেন্টরশিপ পাওয়া যায়
- ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং এর মাধ্যমে প্রফেশনাল ডেভলপমেন্ট সম্ভব হয়
- সুবিধাজনক ক্যারিয়ার নিয়ে পরীক্ষা চালানো যায়
- অনেক সময় ইন্টার্নশিপ থেকে ফুল-টাইম চাকরিও পাওয়া যায়
- অনেক সময় একাডেমিক ক্রেডিট অর্জনেও সাহায্য করে
ইন্টার্নশিপ এর অসুবিধা
- অধিকাংশ সময় ইন্টার্নশিপে কম বেতন কিংবা কোনী বেতনই প্রদান করা হয়না
- সাধারণ বা রিপিটিটিভ কাজ করতে দেওয়া হয়
- ইন্ডাস্ট্রি বা নির্দিষ্ট কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা পেতে ইন্টার্নশিপ এর সময়কাল বেশ ক্ষুদ্র
- ইন্টার্নশিপ থেকে ফুল-টাইম চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম
- অস্থায়ী চাকুরে হওয়ায় অনেক সময় অতিরিক্ত কাজ প্রদান করা হয় ইন্টার্নদের
- কোম্পানির ফুল-টাইম কর্মীদের মত সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়না
- ইন্টার্ন এর অবদান অস্বীকৃত থেকে যায় অধিকাংশ সময়
- নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে
ইন্টার্নশিপে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
প্রথমত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন। কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেওয়ার আগে উক্ত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা অর্জন করে নিন। এই তথ্য পেতে ইন্টারনেট এর সহায়তা গ্রহণ করুন যা একজন ইন্টার্ন হিসেবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে আপনার সময়কে অনেকটা সহজ করে দিবে।
দ্বিতীয়ত সাধারণ কারিগরি দক্ষতা অর্জন করুন। ইন্টারনেট ও মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যার হলো যেকোনো ইন্টার্নশিপ বা চাকরির জন্য অত্যাবশ্যকীয় দক্ষতা। এছাড়া বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলতে পারার পাশাপাশি কম্পিউটারে টাইপ করার দক্ষতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করবেন সেখানের সংস্কৃতি, শিষ্টাচার, ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেগুলো আয়ত্ব করা শিখুন। এসব বিষয় ভবিষ্যতে চাকরি জীবনে বেশ সহায়তা করবে।
এই গেলো ইন্টার্নশিপ এর সাতকাহন। আশা করি এই পোস্ট থেকে ইন্টার্নশিপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সকল ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ইন্টার্নশিপ সম্পর্কিত আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে।